স্টাফ রিপোর্টার: জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে নারায়ণগঞ্জের আডাইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের নোয়াগাঁও এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযানে চালিয়ে তিনটি বোমা নিস্কীয় করাসহ এক জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে একটি সিসিটিভি ফুটেজের মোটরসাইকেল দেখে সেখান থেকে শনাক্ত করা হয় আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। তাকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্যমতে তার বাড়িতেই চলে অভিযান।
অভিযানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সকলেরই প্রশ্ন কে এই আব্দুল্লাহ আল মামুন। মূলত তিনি উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের মিয়া সাহেবের বাড়ির পাশে ও নোয়াগাঁও হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশে নোয়াগাঁও কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন।
রোববার (১১ জুলাই) দিনগত ১২টার দিকে নোয়াগাঁও এলাকার জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়ির অভিযান সমাপ্ত হয়। বাড়িটি উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের মিয়া সাহেবের বাড়ি নামে সকলে চেনে। বাড়ির পাশে রয়েছে নোয়াগাঁও জামে মসজিদ। এই মসজিদেই মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করতেন আব্দুল্লাহ আল মামুন যিনি এই বাড়িতে থেকে বোমা তৈরী করতেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের আসাদুজ্জামান।
সোমবার সরেজমিনে এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানান, দেড় থেকে দুই বছর আগে এই মসজিদে নিয়োগ পান মামুন। এলাকায় সবার সাথেই সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। অনেকের বাড়িতে গিয়ে ছাত্র পড়াতেন এই মামুন। তার পিতার নাম হান্নান এবং মাতার নাম শিউলি। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের চালিতাডাঙ্গায়। পাশের সমাজকল্যান বাজার মসজিদের ইমাম এরশাদ উল¬াহ তাকে এনে নোয়া গাওঁ মসজিদে চাকুরি দেন। তিনি মামুনের ভগ্নিপতি। তবে স্থানীয়দের মাঝে এক ধরণে আতংক বিরাজ করছে।
সকাল থেকেই জঙ্গী বাড়িটি ও আশেপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেখানে কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা। তদন্তের স্বার্থে এখনি এ সংক্রান্ত তথ্য দিতেও নারাজ স্থানীয় পুলিশ। তার সম্পর্কে এলাকার মানুষও কোন তথ্য দিতে নারাজ। এতদিনেও কেউ জানতোনা এই মামুন নব্য জেএমবির সদস্য।
অভিযানের পর বাড়িটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি কক্ষে যেখানে মামুন থাকতেন সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা বই। জিহাদী বইও আছে এর মধ্যে। বিছানা তছনছ করে রাখা। এই কক্ষে বসেই বোমা তৈরীর কাজ করতেন এই মামুন। শক্তিশালী আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপে¬াসিভ ডিভাইস) বোমা তৈরীতে মামুন ছিলেন পারদর্শী।
এলাকাবাসী জানান, মামুন অনেকদিন ধরেই মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে নিয়ে এলাকাবাসীর কখনো কোন সন্দেহ হয়নি। তিনি এলাকায়ই থাকতেন। এখানে নিয়মিত মসজিদে তার দায়িত্ব পালন করতেন। শনিবার (১০ জুলাই) মসজিদে নামাজের সময় তাকে দেখেছেন তারা।
এদিকে তার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, একটি বিছানা রয়েছে। এ ছাড়া আর তেমন কোন আসবাবপত্র নেই। এলাকায় মানুষের সাথেও নিয়মিত মেলামেশা করতেন এবং কথা বলতেন তিনি।
ডিআইজি আসাদুজ্জামান জানান, গত ১৭ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর থেকে শক্তিশালী একটি বোমা উদ্ধার ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্কিীয় করা হয়। ওই ঘটনা তদন্তে একটি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মোটরসাইকেসহ আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ওই বোমা আড়াইহাজারে এই আস্তানায় তৈরি করা হয়। নোয়াগাঁও মিয়াবাড়ি এলাকায় একটি মাদরাসার পাশে এই বাড়িই সেটি। এ রিপোট লেখা পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ আল মামুনকে থানায় হস্তান্তর করেনি আইন শৃংখলাবাহিনী।